1. dailysomoyerbani7starpres@gmail.com : Daily Somoyer Bani 7 Star Press : Daily Somoyer Bani 7 Star Press
  2. miyajifmforhad@gmail.com : Forhad : Forhad
  3. shafidbaraktaz12@gmail.com : Md Shafid Barak Taz : Md Shafid Barak Taz
  4. mdsoyebmia2@gmail.com : Md Soyeb : Md Soyeb
ঢাকা ০৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আখের সঙ্গে ধানচাষ, বদলে যাবে কৃষি অর্থনীতি

Daily somoyer Bani 7 Star Press
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আখের সঙ্গে ধানচাষ, বদলে যাবে কৃষি অর্থনীতি

পাবনায় আখ ক্ষেতে সাথি ফসল হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে ধানের চাষ। এই পদ্ধতিতে অল্প পানিতে আখের সঙ্গে ধান আবাদ করা যাবে। আখের খরচ দিয়েই ধানের দুই-তৃতীয়াংশ খরচ মেটানো সম্ভব। এতে এক-তৃতীয়াংশ খরচ কমে লাভবান হবেন কৃষক। এছাড়া ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আখ উৎপাদনে দূর হবে চিনিকলের কাঁচামাল সংকটও।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিস্টিটিউটের (বিএসআরআই) বিজ্ঞানীরা ধানের সঙ্গে আখ চাষের এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।

কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, এ পদ্ধতিতে ধান চাষে সেচ ও জ্বালানি খরচ প্রচলিত পদ্ধতির এক চতুর্থাংশ। পাশাপাশি জমির বহুমুখী ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভবান হবেন কৃষক। এছাড়া নতুন এই প্রযুক্তিতে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের আখ জোন এলাকায় এক লাখ হেক্টর জমিতে বছরে অতিরিক্ত ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আখ চাষে সময় লাগে কমপক্ষে এক বছর। দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল এ ফসল চাষে লোকসান হওয়ায় গত এক দশকে পাবনাসহ আশেপাশের জেলায় আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে আখের উৎপাদন। ফলে কাঁচামালের অভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয় উত্তরবঙ্গের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোকে।

এ সংকট নিরসনে আখ চাষকে লাভজনক করে কৃষককে আগ্রহী করতে সাথি ফসল হিসেবে ধান চাষের পরিকল্পনা করেন বিএসআরআই’র বিজ্ঞানীরা। এর আওতায় চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের আওতাধীন ঈশ্বরদীর মুলাডুলি কৃষি ফার্মসহ কয়েকটি জায়গায় গত তিন বছরে ধারাবাহিক চেষ্টায় পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সফলতা আসায় এখন চলছে খুঁটিনাটি পরীক্ষা। সীমাবদ্ধতা দূর করে দ্রুতই কৃষক পর্যায়ে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার আশা গবেষকদের।

বিএসআরআই’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামস তাবরিজ জানান, সাধারণত উত্তরাঞ্চলে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে প্রায় আড়াই হাজার লিটার পানি লাগে। কিন্তু আখ খরাসহিষ্ণু ফসল। ধান ও আখ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ফসল হওয়ায় এই দুই ফসলের মিশ্র চাষে পানি সাশ্রয় হয়। ফলে সেচ ও জ্বালানি খরচ কম হয়। একই সঙ্গে ধানের জন্য প্রয়োগ করা সার আখেরও কাজে লাগে। তাই সার্বিকভাবে কৃষকের ভালো মুনাফা আসবে।

বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং আখ ও ধানের যৌথ চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, এ পদ্ধতির চাষে কৃষকের খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমবে। আখ চাষে সময় বেশি লাগায় কৃষক শুধু আখ চাষ করে খুব বেশি লাভবান হচ্ছিলেন না। তাই আমরা খরচ কমিয়ে অর্থনৈতিক লাভের উপায় খুঁজছিলাম। সেক্ষেত্রে আখ ও ধানের যৌথ চাষ খুবই উপযোগী। আমরা এখন চূড়ান্ত পরীক্ষা করছি। দ্রুতই এটি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, বেড পদ্ধতি ও সরাসরি আবাদ, এই দুইভাবেই আখ ও ধানের যৌথ চাষ করা সম্ভব। এতে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় ভূগর্ভস্থ পানি প্রয়োজন হবে না। ফলে কমবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খরচ। নতুন প্রযুক্তির এ চাষাবাদ পদ্ধতি সম্প্রসারিত হলে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারে কৃষি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, আখ অর্থকরী ফসল। ধান ও আখের যৌথ চাষ নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক বড় সম্ভাবনা চাষীদের জন্য। তবে এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে রোপণ ও পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে কৃষক আবাদ করতে পারলে লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমদ বলেন, যেহেতু ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল, সে কারণে আখ ক্ষেতে ধানের চাষ দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে বলেই আমাদের ধারণা। এতে একই খরচে কৃষক বাড়তি ফসল পাবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

  • আপডেট সময় : ০১:৩৪:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • / ৫৩২ বার পড়া হয়েছে

আখের সঙ্গে ধানচাষ, বদলে যাবে কৃষি অর্থনীতি

আপডেট সময় : ০১:৩৪:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

আখের সঙ্গে ধানচাষ, বদলে যাবে কৃষি অর্থনীতি

পাবনায় আখ ক্ষেতে সাথি ফসল হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে ধানের চাষ। এই পদ্ধতিতে অল্প পানিতে আখের সঙ্গে ধান আবাদ করা যাবে। আখের খরচ দিয়েই ধানের দুই-তৃতীয়াংশ খরচ মেটানো সম্ভব। এতে এক-তৃতীয়াংশ খরচ কমে লাভবান হবেন কৃষক। এছাড়া ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আখ উৎপাদনে দূর হবে চিনিকলের কাঁচামাল সংকটও।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিস্টিটিউটের (বিএসআরআই) বিজ্ঞানীরা ধানের সঙ্গে আখ চাষের এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।

কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, এ পদ্ধতিতে ধান চাষে সেচ ও জ্বালানি খরচ প্রচলিত পদ্ধতির এক চতুর্থাংশ। পাশাপাশি জমির বহুমুখী ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভবান হবেন কৃষক। এছাড়া নতুন এই প্রযুক্তিতে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের আখ জোন এলাকায় এক লাখ হেক্টর জমিতে বছরে অতিরিক্ত ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আখ চাষে সময় লাগে কমপক্ষে এক বছর। দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল এ ফসল চাষে লোকসান হওয়ায় গত এক দশকে পাবনাসহ আশেপাশের জেলায় আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে আখের উৎপাদন। ফলে কাঁচামালের অভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয় উত্তরবঙ্গের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোকে।

এ সংকট নিরসনে আখ চাষকে লাভজনক করে কৃষককে আগ্রহী করতে সাথি ফসল হিসেবে ধান চাষের পরিকল্পনা করেন বিএসআরআই’র বিজ্ঞানীরা। এর আওতায় চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের আওতাধীন ঈশ্বরদীর মুলাডুলি কৃষি ফার্মসহ কয়েকটি জায়গায় গত তিন বছরে ধারাবাহিক চেষ্টায় পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সফলতা আসায় এখন চলছে খুঁটিনাটি পরীক্ষা। সীমাবদ্ধতা দূর করে দ্রুতই কৃষক পর্যায়ে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার আশা গবেষকদের।

বিএসআরআই’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামস তাবরিজ জানান, সাধারণত উত্তরাঞ্চলে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে প্রায় আড়াই হাজার লিটার পানি লাগে। কিন্তু আখ খরাসহিষ্ণু ফসল। ধান ও আখ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ফসল হওয়ায় এই দুই ফসলের মিশ্র চাষে পানি সাশ্রয় হয়। ফলে সেচ ও জ্বালানি খরচ কম হয়। একই সঙ্গে ধানের জন্য প্রয়োগ করা সার আখেরও কাজে লাগে। তাই সার্বিকভাবে কৃষকের ভালো মুনাফা আসবে।

বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং আখ ও ধানের যৌথ চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, এ পদ্ধতির চাষে কৃষকের খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমবে। আখ চাষে সময় বেশি লাগায় কৃষক শুধু আখ চাষ করে খুব বেশি লাভবান হচ্ছিলেন না। তাই আমরা খরচ কমিয়ে অর্থনৈতিক লাভের উপায় খুঁজছিলাম। সেক্ষেত্রে আখ ও ধানের যৌথ চাষ খুবই উপযোগী। আমরা এখন চূড়ান্ত পরীক্ষা করছি। দ্রুতই এটি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, বেড পদ্ধতি ও সরাসরি আবাদ, এই দুইভাবেই আখ ও ধানের যৌথ চাষ করা সম্ভব। এতে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় ভূগর্ভস্থ পানি প্রয়োজন হবে না। ফলে কমবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খরচ। নতুন প্রযুক্তির এ চাষাবাদ পদ্ধতি সম্প্রসারিত হলে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারে কৃষি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, আখ অর্থকরী ফসল। ধান ও আখের যৌথ চাষ নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক বড় সম্ভাবনা চাষীদের জন্য। তবে এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে রোপণ ও পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে কৃষক আবাদ করতে পারলে লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমদ বলেন, যেহেতু ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল, সে কারণে আখ ক্ষেতে ধানের চাষ দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে বলেই আমাদের ধারণা। এতে একই খরচে কৃষক বাড়তি ফসল পাবেন।