1. dailysomoyerbani7starpres@gmail.com : Daily Somoyer Bani 7 Star Press : Daily Somoyer Bani 7 Star Press
  2. miyajifmforhad@gmail.com : Forhad : Forhad
  3. rohimabegumofficial12@gmail.com : Daily Somoyer Bani 7 Star Press 7 Star Press : Daily Somoyer Bani 7 Star Press 7 Star Press
  4. shafidbaraktaz12@gmail.com : Md Shafid Barak Taz : Md Shafid Barak Taz
ঢাকা ১১:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
নির্বাচনকে ব্যাহত করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি পরিকল্পিত : বিএনপি গোপালগঞ্জ এখন শান্ত রয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ফোন পেয়ে ঘর থেকে বের হয় মাদরাসাছাত্রী, পুকুরে মিলল লাশ এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মাদারীপুরে বিক্ষোভ তাড়াশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে ফসলের বিস্তৃর্ণ মাঠ ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে সোহাগকে হত্যা : ডিএমপি গোপালগঞ্জ ইস্যুতে যা বললেন এনসিপির তাসনিম জারা প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু দৃষ্টির সাফল্যে মুগ্ধ তারেক রহমান, শিক্ষার দায়িত্ব নিলেন ৭ বছরের শিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি, সেই সৎমা গ্রেপ্তার

মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কোন স্টেশনে

মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কোন স্টেশনে, কম কোথায়, কারণ কী

Daily Somoyer Bani 7 Star Press
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কোন স্টেশনে, কম কোথায়, কারণ কী

ঢাকার মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ওঠে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন থেকে। চালুর পর এই স্টেশন থেকে পৌনে দুই কোটির বেশি মানুষ মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে। আর মেট্রোয় সবচেয়ে বেশি যাত্রী উঠেছে গত ফেব্রুয়ারিতে, বইমেলার মাসে।

এর বাইরে এক কোটির বেশি যাত্রীর তালিকায় রয়েছে উত্তরা উত্তর, মতিঝিল, আগারগাঁও, কারওয়ান বাজার ও বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশন। আর সবচেয়ে কম যাত্রী যাতায়াত করেছে উত্তরা দক্ষিণ ও বিজয় সরণি স্টেশন থেকে।

মিরপুরে যাত্রী বেশি হওয়ার বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের এই পথটি খুবই ব্যস্ত এলাকার ওপর দিয়ে গেছে। ফলে যাত্রী বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল আরও ঘন ঘন চালানোর বিষয়ে কাজ চলছে। ভবিষ্যতে আরও যাত্রী বাড়বে।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, পল্লবী ও উত্তরা মধ্য স্টেশনের মাঝামাঝি উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের আশপাশে বাসাবাড়ি খুব বেশি নেই। এখানে যাত্রী কম হওয়ার এটি একটি কারণ। আর মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে বিজয় সরণি স্টেশনকে যুক্ত করার তেমন কোনো গণপরিবহন নেই। এই স্টেশনের যাত্রী কম হওয়ার এটি একটি কারণ।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, উদ্বোধনের পর থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৫ কোটি ৭৫ লাখের মতো যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে। শুরুতে মেট্রোরেল সীমিত আকারে চলেছে। সব স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামা শুরু হয় ২০২৩ সালের শেষ দিনে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু মেট্রো রেলপথটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। এই লাইনের জন্য ২৪ সেট মেট্রো ট্রেন রয়েছে। ছয়টি বগি নিয়ে একেকটি মেট্রোরেলের সেট তৈরি হয়েছে। এই পথে স্টেশন রয়েছে ১৬টি।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ১৪টি ট্রেন সব সময় লাইনে চলাচলরত অবস্থায় থাকে। তিন সেট ট্রেন বিশেষ প্রয়োজনে লাগতে পারে এই বিবেচনায় প্রস্তুত রাখা হয়। লাইন এবং সংকেত ব্যবস্থা পুরোপুরি ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য সকালে একটি ট্রেন যাত্রী ছাড়াই চলে। বাকি ছয় সেট ট্রেন অব্যবহৃতই থাকে। দুই ট্রেনের মাঝখানের বিরতি আরও কমিয়ে আনলে সব ট্রেনেরই সদ্ব্যবহার হবে। যাত্রী সংখ্যাও আরও বাড়বে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। তবে লোকবলের অভাবে আরও ঘন ঘন ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। রাতেও মেট্রোরেলের চলাচলের সময় বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেট্রোরেলের যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে। ২০২২ সালে আংশিক চালুর পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২২ কোটি টাকার বেশি।

সবচেয়ে বেশি যাত্রী যেসব স্টেশনে

ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, শুরু থেকে গত জুন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এক কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৬৯ জন যাত্রী মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে। এর মধ্যে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় স্টেশনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে দুই মাসের বেশি স্টেশনটি বন্ধ ছিল। নতুবা এই স্টেশন থেকে যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল পরে চালু হয়েছে। ফলে মোট যাত্রী কিছুটা বেশি। তবে ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, গত ছয় মাসের হিসাবেও দেখা গেছে অন্যান্য স্টেশনের তুলনায় মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে যাত্রী বেশি হয়।

মিরপুর-১০ নম্বর এলাকাটি একটি জংশন। গাবতলী, মিরপুর-১ ও মিরপুর-২ হয়ে অনেকেই মিরপুর-১০ নম্বরে নামেন। সেনানিবাস, মিরপুর-১৪ এবং পূর্বাংশের অনেক মানুষের মিলিত হওয়ার স্থানও এটি। এ ছাড়া আশপাশে বসতি, ব্যবসা ও বাণিজ্যিক স্থাপনাও বেশি। ফলে এই স্টেশনটির যাত্রী সংখ্যা বেশি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক কোটি ৭৬ লাখের বেশি যাত্রী উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে যাতায়াত করেছে। অন্যদিকে মতিঝিল স্টেশন থেকে যাত্রী যাতায়াত করেছে ১ কোটি ৬৯ লাখের মতো। দুটিই মেট্রোরেলের দুই দিকের প্রারম্ভিক স্টেশন। একদিকে মতিঝিলের অফিস পাড়ার চাপ। অন্যদিকে বৃহত্তর উত্তরা, টঙ্গী, এমনকি গাজীপুরের মানুষও এই পথে এখন যাতায়াত করে।

ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, তুলনামূলকভাবে মতিঝিলের যাত্রী এখন বেশি। মেট্রোরেল চালুর দিন থেকেই উত্তরা থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করছে। মতিঝিলে মেট্রোরেল চালু হয়েছে আরও প্রায় এক বছর পর। এ জন্যে মোট যাত্রীর সংখ্যা উত্তরা উত্তর স্টেশনে বেশি।

এর বাইরে আগারগাঁও স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে ১ কোটি ৫২ লাখের বেশি যাত্রী। বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশন থেকে যাত্রী যাতায়াত করেছে ১ কোটি ৩৮ লাখের কাছাকাছি। কারওয়ান বাজারে যাত্রী হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখের মতো।

সবচেয়ে কম যাত্রী যেসব স্টেশনে

মেট্রোরেল চালুর শুরুর দিকেই চালু হয় উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনটি। কিন্তু এই স্টেশনটি থেকে যাতায়াত করেছে পৌনে ১২ লাখের মতো যাত্রী। দিনে ওই স্টেশনে হাজার দু-এক যাত্রী হয় বলে ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে। এই স্টেশনটি পল্লবী এবং উত্তরা মধ্য স্টেশনের মাঝামাঝি। আশপাশে বাসা-বাড়িও খুব একটা নেই। তবে ভবিষ্যতে এই স্টেশনে যাত্রী বাড়বে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। এরপর সবচেয়ে কম ২৬ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে বিজয় সরণি স্টেশন থেকে। এই স্টেশনের আশপাশেও তেমন আবাসিক এলাকা নেই।

মেট্রোরেল প্রকল্পটি নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে বিজয় সরণি স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে উঠবে। তবে এই স্টেশনের সঙ্গে মোহাম্মদপুর এলাকাকে যুক্ত করার বাস বা অন্য কোনো গণপরিবহন তেমন নেই।

উত্তরা মধ্য স্টেশন থেকে যাত্রী চলাচল করেছে সাড়ে ৩৭ লাখের মতো। এখানেও পুরোপুরি বসতি গড়ে ওঠেনি। ভবিষ্যতে যাত্রী বাড়বে। কাজীপাড়া থেকে যাত্রী যাতায়াত করেছে ৫০ লাখের কাছাকাছি। শেওড়াপাড়া থেকে যাত্রী হয়েছে ৭৬ লাখের কাছাকাছি। শাহবাগে যাত্রীর সংখ্যা ৭২ লাখের মতো। বাকি স্টেশনগুলোতে এক কোটির কাছাকাছি যাত্রী পরিবহন করেছে।

সবচেয়ে বেশি যাত্রী ফেব্রুয়ারিতে

মেট্রোরেলে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে চার লাখ যাত্রী যাতায়াত করে। চালুর পর সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। মূলত বই মেলার কারণেই এই বাড়তি যাত্রী বলে ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা মনে করছেন। এ ছাড়া ওই সময়টায় প্রায় প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পেশাজীবীসহ নানা শ্রেণির মানুষ রাস্তা দখল করে আন্দোলন নামে। এতে সড়ক তীব্র যানজট হয়। যানজট এড়াতে মেট্রোরেল ব্যবহার বাড়তে পারে।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, চালুর পর সর্বাধিক যাত্রী যাতায়াত করেছে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন মোট যাত্রী পরিবহন করা হয় ৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৮১ জন। এর আগের দিন মেট্রোরেলে যাত্রী হয় ৪ লাখ ৯ হাজার ৪৫০ জন। এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি মেট্রোরেলে যাত্রী হয় ৪ লাখ ৩ হাজার ১৬৪ জন।

বর্তমানে মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। আর এই স্টেশন থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে ৯টা ৪০ মিনিটে। এই ট্রেন উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছায় রাত ১০টা ২০ মিনিটে। উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। শেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়।

বর্তমানে ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ার) মেট্রোরেল চলাচল করে প্রতি আট মিনিট পর পর। অন্য সময় (অফপিক আওয়ার) ১০ মিনিট পর পর ট্রেন চলাচল করে। শুক্রবার চলে বিকেল তিনটা থেকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন পিক আওয়ারে ৮ মিনিট এবং অফ পিক আওয়ারে ১২ মিনিট পর পর মেট্রোরেল চলাচল করে।

ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর পর একটি ট্রেন চলাচল করার সক্ষমতা আছে। এ ছাড়া সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে বলে প্রকল্প নেওয়ার সময় প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু লোকবলের অভাবে ঘন ঘন এবং বেশি সময় ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। ফলে আরও যাত্রী বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বন্ধ ছিল ৩৭ দিন

কোটা সংস্কার ঘিরে আন্দোলন চলাকালে গত বছর ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেদিন বিকেল পাঁচটায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত বছর ২৫ আগস্ট উত্তরা থেকে মতিঝিল পথে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। তবে কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন তখনো বন্ধ ছিল। মেরামত করে প্রায় দুই মাস পর গত ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা হয়। আর বন্ধ হওয়ার ২ মাস ২৭ দিন পর চালু করা হয় মিরপুর-১০ স্টেশন।

অবশ্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বলা হয়েছিল, মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত দুই স্টেশন চালু করতে এক বছর লাগবে। ব্যয় হতে পারে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে অন্য স্টেশন ও স্থাপনা থেকে কিছু যন্ত্রপাতি স্থানান্তর এবং স্থানীয়ভাবে কিছু পণ্য কিনে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করে দুটি স্টেশন চালু করা হয়। অন্য স্থান থেকে যেসব যন্ত্র ও সামগ্রী নেওয়া হয়ে, সেগুলোসহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে ১৮ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

  • আপডেট সময় : ০২:৫৩:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • / ৫৭২ বার পড়া হয়েছে

মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কোন স্টেশনে

মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কোন স্টেশনে, কম কোথায়, কারণ কী

আপডেট সময় : ০২:৫৩:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কোন স্টেশনে, কম কোথায়, কারণ কী

ঢাকার মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ওঠে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন থেকে। চালুর পর এই স্টেশন থেকে পৌনে দুই কোটির বেশি মানুষ মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে। আর মেট্রোয় সবচেয়ে বেশি যাত্রী উঠেছে গত ফেব্রুয়ারিতে, বইমেলার মাসে।

এর বাইরে এক কোটির বেশি যাত্রীর তালিকায় রয়েছে উত্তরা উত্তর, মতিঝিল, আগারগাঁও, কারওয়ান বাজার ও বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশন। আর সবচেয়ে কম যাত্রী যাতায়াত করেছে উত্তরা দক্ষিণ ও বিজয় সরণি স্টেশন থেকে।

মিরপুরে যাত্রী বেশি হওয়ার বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের এই পথটি খুবই ব্যস্ত এলাকার ওপর দিয়ে গেছে। ফলে যাত্রী বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল আরও ঘন ঘন চালানোর বিষয়ে কাজ চলছে। ভবিষ্যতে আরও যাত্রী বাড়বে।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, পল্লবী ও উত্তরা মধ্য স্টেশনের মাঝামাঝি উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের আশপাশে বাসাবাড়ি খুব বেশি নেই। এখানে যাত্রী কম হওয়ার এটি একটি কারণ। আর মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে বিজয় সরণি স্টেশনকে যুক্ত করার তেমন কোনো গণপরিবহন নেই। এই স্টেশনের যাত্রী কম হওয়ার এটি একটি কারণ।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, উদ্বোধনের পর থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৫ কোটি ৭৫ লাখের মতো যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে। শুরুতে মেট্রোরেল সীমিত আকারে চলেছে। সব স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামা শুরু হয় ২০২৩ সালের শেষ দিনে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু মেট্রো রেলপথটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। এই লাইনের জন্য ২৪ সেট মেট্রো ট্রেন রয়েছে। ছয়টি বগি নিয়ে একেকটি মেট্রোরেলের সেট তৈরি হয়েছে। এই পথে স্টেশন রয়েছে ১৬টি।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ১৪টি ট্রেন সব সময় লাইনে চলাচলরত অবস্থায় থাকে। তিন সেট ট্রেন বিশেষ প্রয়োজনে লাগতে পারে এই বিবেচনায় প্রস্তুত রাখা হয়। লাইন এবং সংকেত ব্যবস্থা পুরোপুরি ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য সকালে একটি ট্রেন যাত্রী ছাড়াই চলে। বাকি ছয় সেট ট্রেন অব্যবহৃতই থাকে। দুই ট্রেনের মাঝখানের বিরতি আরও কমিয়ে আনলে সব ট্রেনেরই সদ্ব্যবহার হবে। যাত্রী সংখ্যাও আরও বাড়বে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। তবে লোকবলের অভাবে আরও ঘন ঘন ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। রাতেও মেট্রোরেলের চলাচলের সময় বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেট্রোরেলের যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে। ২০২২ সালে আংশিক চালুর পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২২ কোটি টাকার বেশি।

সবচেয়ে বেশি যাত্রী যেসব স্টেশনে

ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, শুরু থেকে গত জুন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এক কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৬৯ জন যাত্রী মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে। এর মধ্যে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় স্টেশনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে দুই মাসের বেশি স্টেশনটি বন্ধ ছিল। নতুবা এই স্টেশন থেকে যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল পরে চালু হয়েছে। ফলে মোট যাত্রী কিছুটা বেশি। তবে ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, গত ছয় মাসের হিসাবেও দেখা গেছে অন্যান্য স্টেশনের তুলনায় মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে যাত্রী বেশি হয়।

মিরপুর-১০ নম্বর এলাকাটি একটি জংশন। গাবতলী, মিরপুর-১ ও মিরপুর-২ হয়ে অনেকেই মিরপুর-১০ নম্বরে নামেন। সেনানিবাস, মিরপুর-১৪ এবং পূর্বাংশের অনেক মানুষের মিলিত হওয়ার স্থানও এটি। এ ছাড়া আশপাশে বসতি, ব্যবসা ও বাণিজ্যিক স্থাপনাও বেশি। ফলে এই স্টেশনটির যাত্রী সংখ্যা বেশি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক কোটি ৭৬ লাখের বেশি যাত্রী উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে যাতায়াত করেছে। অন্যদিকে মতিঝিল স্টেশন থেকে যাত্রী যাতায়াত করেছে ১ কোটি ৬৯ লাখের মতো। দুটিই মেট্রোরেলের দুই দিকের প্রারম্ভিক স্টেশন। একদিকে মতিঝিলের অফিস পাড়ার চাপ। অন্যদিকে বৃহত্তর উত্তরা, টঙ্গী, এমনকি গাজীপুরের মানুষও এই পথে এখন যাতায়াত করে।

ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, তুলনামূলকভাবে মতিঝিলের যাত্রী এখন বেশি। মেট্রোরেল চালুর দিন থেকেই উত্তরা থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করছে। মতিঝিলে মেট্রোরেল চালু হয়েছে আরও প্রায় এক বছর পর। এ জন্যে মোট যাত্রীর সংখ্যা উত্তরা উত্তর স্টেশনে বেশি।

এর বাইরে আগারগাঁও স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে ১ কোটি ৫২ লাখের বেশি যাত্রী। বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশন থেকে যাত্রী যাতায়াত করেছে ১ কোটি ৩৮ লাখের কাছাকাছি। কারওয়ান বাজারে যাত্রী হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখের মতো।

সবচেয়ে কম যাত্রী যেসব স্টেশনে

মেট্রোরেল চালুর শুরুর দিকেই চালু হয় উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনটি। কিন্তু এই স্টেশনটি থেকে যাতায়াত করেছে পৌনে ১২ লাখের মতো যাত্রী। দিনে ওই স্টেশনে হাজার দু-এক যাত্রী হয় বলে ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে। এই স্টেশনটি পল্লবী এবং উত্তরা মধ্য স্টেশনের মাঝামাঝি। আশপাশে বাসা-বাড়িও খুব একটা নেই। তবে ভবিষ্যতে এই স্টেশনে যাত্রী বাড়বে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। এরপর সবচেয়ে কম ২৬ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে বিজয় সরণি স্টেশন থেকে। এই স্টেশনের আশপাশেও তেমন আবাসিক এলাকা নেই।

মেট্রোরেল প্রকল্পটি নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে বিজয় সরণি স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে উঠবে। তবে এই স্টেশনের সঙ্গে মোহাম্মদপুর এলাকাকে যুক্ত করার বাস বা অন্য কোনো গণপরিবহন তেমন নেই।

উত্তরা মধ্য স্টেশন থেকে যাত্রী চলাচল করেছে সাড়ে ৩৭ লাখের মতো। এখানেও পুরোপুরি বসতি গড়ে ওঠেনি। ভবিষ্যতে যাত্রী বাড়বে। কাজীপাড়া থেকে যাত্রী যাতায়াত করেছে ৫০ লাখের কাছাকাছি। শেওড়াপাড়া থেকে যাত্রী হয়েছে ৭৬ লাখের কাছাকাছি। শাহবাগে যাত্রীর সংখ্যা ৭২ লাখের মতো। বাকি স্টেশনগুলোতে এক কোটির কাছাকাছি যাত্রী পরিবহন করেছে।

সবচেয়ে বেশি যাত্রী ফেব্রুয়ারিতে

মেট্রোরেলে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে চার লাখ যাত্রী যাতায়াত করে। চালুর পর সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। মূলত বই মেলার কারণেই এই বাড়তি যাত্রী বলে ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা মনে করছেন। এ ছাড়া ওই সময়টায় প্রায় প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পেশাজীবীসহ নানা শ্রেণির মানুষ রাস্তা দখল করে আন্দোলন নামে। এতে সড়ক তীব্র যানজট হয়। যানজট এড়াতে মেট্রোরেল ব্যবহার বাড়তে পারে।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, চালুর পর সর্বাধিক যাত্রী যাতায়াত করেছে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন মোট যাত্রী পরিবহন করা হয় ৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৮১ জন। এর আগের দিন মেট্রোরেলে যাত্রী হয় ৪ লাখ ৯ হাজার ৪৫০ জন। এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি মেট্রোরেলে যাত্রী হয় ৪ লাখ ৩ হাজার ১৬৪ জন।

বর্তমানে মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। আর এই স্টেশন থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে ৯টা ৪০ মিনিটে। এই ট্রেন উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছায় রাত ১০টা ২০ মিনিটে। উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। শেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়।

বর্তমানে ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ার) মেট্রোরেল চলাচল করে প্রতি আট মিনিট পর পর। অন্য সময় (অফপিক আওয়ার) ১০ মিনিট পর পর ট্রেন চলাচল করে। শুক্রবার চলে বিকেল তিনটা থেকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন পিক আওয়ারে ৮ মিনিট এবং অফ পিক আওয়ারে ১২ মিনিট পর পর মেট্রোরেল চলাচল করে।

ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর পর একটি ট্রেন চলাচল করার সক্ষমতা আছে। এ ছাড়া সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে বলে প্রকল্প নেওয়ার সময় প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু লোকবলের অভাবে ঘন ঘন এবং বেশি সময় ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। ফলে আরও যাত্রী বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বন্ধ ছিল ৩৭ দিন

কোটা সংস্কার ঘিরে আন্দোলন চলাকালে গত বছর ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেদিন বিকেল পাঁচটায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত বছর ২৫ আগস্ট উত্তরা থেকে মতিঝিল পথে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। তবে কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন তখনো বন্ধ ছিল। মেরামত করে প্রায় দুই মাস পর গত ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা হয়। আর বন্ধ হওয়ার ২ মাস ২৭ দিন পর চালু করা হয় মিরপুর-১০ স্টেশন।

অবশ্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বলা হয়েছিল, মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত দুই স্টেশন চালু করতে এক বছর লাগবে। ব্যয় হতে পারে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে অন্য স্টেশন ও স্থাপনা থেকে কিছু যন্ত্রপাতি স্থানান্তর এবং স্থানীয়ভাবে কিছু পণ্য কিনে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করে দুটি স্টেশন চালু করা হয়। অন্য স্থান থেকে যেসব যন্ত্র ও সামগ্রী নেওয়া হয়ে, সেগুলোসহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে ১৮ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়।