Daily somoyer Bani 7 Star Press
দেশ সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে : আমীর খসরু
দেশ সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে : আমীর খসরু
রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন না হয় দলগুলোর অঙ্গীকার করা দরকার : জামায়াত
দেশ সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই হবে এই অন্তর্বতী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে, আমরা কোথায় যাচ্ছি, কেউ জানি না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের সহনশীল হতে হবে। পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ থাকতে হবে। সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাইফুল আলম খান বলেছেন, দেশে যেন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি না হয় সে জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া দরকার।
সোমবার (১৯ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬ : নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক বহু অংশীজনের সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সিপিডি ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের উপর দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া কোনো অরাজনৈতিক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়।
তিনি বলেন, এখন মানবিক করিডোরের কথা বলছেন। এটি সেনসেটিভ ইস্যু, বাংলাদেশের সিকিউরিটির প্রশ্ন। জিও স্ট্যাটিজিক ডিসিশন। আপনারা তো এই ডিসিশনের দিকে যেতে পারেন না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ডিসিশনে যাচ্ছেন। একটা নন-পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট, একটা ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের কি এসব সিদ্ধান্তে যাওয়ার দরকার আছে?
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, একটা ডেমোক্রেটিভ সিদ্ধান্তের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে। দেশের মালিকানা ফেরানোর জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেই আলোচনা বাদ দিয়ে বাকি সবকিছু আমরা করছি। এসবের মাধ্যমে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) কী প্রমাণ করতে চাচ্ছেন?
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, ইন্টেরিম সরকারের ওপর খুব বেশি প্রত্যাশাও নেই। কারণ, এ ধরনের সরকারের কিছু লিমিটেশন আছে। তারা জনগণের মেন্ডেট নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে না। তারা পাবলিক ফিডব্যাক, জনগণ ও বিজনেস কমিউনিটির নার্ভ ফিল করতে পারে না।
তিনি বলেন, এই সরকারের ওপর মানুষের যেটুকু এক্সপেকটেশন সেটা একটু ভিন্ন। ডেমোক্রেটিভ অর্ডারে ফিরে যাওয়ার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার সেটাই হচ্ছে এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু আমরা সেখানে কতটুকু এগোচ্ছি?
আনসারটেনিটির মাধ্যমে যেখানে স্থিতিশীলতা থাকবে না, সখানে মানুষ ইনভেস্টমেন্টেও ভরসা পাবে না। আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে, এ সরকার কতদিন থাকবে, নির্বাচন কবে হবে, আগামী নির্বাচনের পর বাংলাদেশ কোথায় যাবে, এ বিষয়গুলো সবার মনে কাজ করছে। কিন্তু আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, এই যে একটা ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম হলো, আমরা স্বাগত জানাই। তবে আমরা মনে করি ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম কোনো সরকারের দায়িত্ব না। বরং আমাদের সবার দায়িত্ব। এখানে ইনভেস্টমেন্টের অবশ্যই দরকার আছে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া তো সেভাবে ইনভেস্টমেন্ট আসবে না। ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া কোনো দেশই চলতে পারবে না। কারণ, ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশই উন্নতি করতে পারে না।
আমীর খসরু বলেন, এমপ্লয়মেন্ট ক্রিয়েট করতে হলে আপনাকে প্রথমেই আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে ইনভেস্ট করতে হবে। সেটা দেশে হোক বা বিদেশে। সেই জায়গাটিতে যে কনফিডেন্স দরকার, যে রোডম্যাপ দরকার, যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দরকার, শর্টটার্ম, মিডটার্ম বা লংটার্ম সেটা তো কেউ করতে পারছে না। সবাই অপেক্ষা করছে, পরবর্তী পদক্ষেপ কী কেউ বুঝতে পারছে না। কারণ, দেশে এখন না কোনো ইলেকটেড সরকার আছে, না কোনো রোডম্যাপ আছে, যার ওপর ভরসা করে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
তিনি বলেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে নিচ্ছে না। তারা অপেক্ষা করছেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। ঐক্যমত কোথায় হয়েছে? যেখানে ঐকমত্য হবে না সেটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমাদের অর্থনৈতিক পলিসি আছে। সব দলেরই অর্থনৈতিক পলিসি আছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান বলেন, আমরা দেখছি যে দেশের একটা বড় অংশ বেকার। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত। আমাদের দেশ ছোট দেশ, এখানে শিল্পায়ন কম হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রতি বেশি জোর দিতে পারি। ভারতের লোকেরা মধ্যপ্রাচ্যের সব জায়গায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। এক্ষেত্রে আমাদের পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের একটা বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার হওয়া দরকার আমরা দুর্নীতির ভেতরে প্রবেশ করবো না। গত ১৬ বছর বা তার আগেও দুর্নীতি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে আমাদেরকে বাজেটে নজর দিতে হবে। নজর দিতে হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের প্রতি। এখানে বাজেট না কমিয়ে আরো বাড়ানো যায় কিনা।